বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিপর্যয় নিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদন
Editor: CanBangla
Thursday, 08 June 2023 154

অনলাইন ডেস্ক : এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে খারাপ বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং মুদ্রার মূল্য হ্রাসের মধ্যে অনিয়মিত আবহাওয়া এবং জ্বালানি আমদানির জন্য অর্থ প্রদানের অসুবিধার কারণে এমনটি ঘটছে। সরকারি তথ্য বিশ্লেষণ করে এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে রয়টার্স।
প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, আরও তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস এবং জুলাই-অক্টোবরের সর্বোচ্চ জ্বালানি-ব্যবহারের মাসগুলো কাছে আসার সাথে সাথে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি সতর্ক করেছেন যে- ১৭ কোটির দেশে আগামী দিনগুলোতে বিদ্যুৎ বিভ্রাট অব্যাহত থাকতে পারে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক বাংলাদেশে ২০২৩ সালের প্রথম পাঁচ মাসে লোডশেডিংয়ের কারণে গার্মেন্ট খাতে যে পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়েছে, তা ১১৫ দিনের সমান। এটি ২০২২ সালে গোটা বছরে ছিল ১১৩ দিনের সমান।
বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্যে দেখা গেছে, বিদ্যুতের বিভ্রাট গভীর সন্ধ্যায় এবং ভোরের দিকে সবচেয়ে ব্যাপক হয়েছে। বাসিন্দারা এবং ছোট ব্যবসায়িকরা ১০-১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের অভিযোগ করেছেন।
তথ্যে দেখা গেছে, সোমবার প্রথম দিকে সরবরাহ চাহিদার তুলনায় ২৫% কম ছিল। জুনের প্রথম সপ্তাহে সামগ্রিক সরবরাহ ঘাটতি গড়ে ১৫% বেড়েছে। মে মাসে এটি গড়ে ছিল ৫.২%।
বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ঘাটতির প্রধান কারণ জ্বালানি সংকট। বাংলাদেশে প্রতিদিন গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে ১১ দশমিক ৫ গিগাওয়াট ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে ৩ দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। জাতীয় গ্রিড অপারেটর সংস্থার ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, জ্বালানির অভাবে সোমবার গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন এক চতুর্থাংশ এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন দুই তৃতীয়াংশ হ্রাস পেয়েছে।
এছাড়া ডিজেল এবং জ্বালানী তেলে চালিত ৭.৫ গিগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের ৪০% এর বেশি কাজ করতে পারেনি, কারণ এখানেও জ্বালানির অভাব ছিল।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পেট্রোলিয়াম ফার্ম এপ্রিলের শেষের দিকে এবং মে মাসের প্রথম দিকে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে মার্কিন ডলারের ঘাটতির কারণে সিনোপেক, ইন্ডিয়ান অয়েল এবং ভিটলক জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করেছে জানিয়ে সতর্ক করে। নতুন তেলের যোগান আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের জ্বালানি তেলের মজুত দ্রুত কমছে বলেও সতর্কবার্তা দিয়েছিল বিপিসি।
বাংলাদেশি মুদ্রা টাকার মূল্য গত বারো মাসে ছয় ভাগের বেশি কমেছে এবং ডলারের রিজার্ভ এপ্রিল মাসে এক তৃতীয়াংশ কমে সাত বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানে এসেছে। কয়লা এবং তরল জ্বালানি চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচে বেড়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎস বা খনিগুলো থেকে গ্যাসের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং গ্যাস রপ্তানিকারী অন্য কোনো দেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস চুক্তি করতে না পারার ফলে ২০২২ সাল থেকেই গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে ঘাটতি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি অবশ্য এলএনজির দাম হ্রাস পাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খানিকটা বেড়েছে।
বাংলাদেশের পরিবেশবান্ধব বা পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা একেবারেই নগণ্য। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি মেটাতে মোট চাহিদার ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ আমদানি করতে হয়। কিন্তু ডলারের মজুত কমতে থাকায় এই আমদানিও এখন সংকটের মুখে পড়েছে।
সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীলতা। ২০২২ সালে ছিল ৮ শতাংশ। এটি এই বছরে পৌঁছেছে ১৪ শতাংশে।